পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে রাজশাহীজুড়ে বৃক্ষরোপণ এবং কুরআনের হাফেজ, এতিম শিশু, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী, প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক, শ্রমিক ও নারীদের গাছ উপহার দিয়েছে গ্র্যাজুয়েট নার্স ও স্টুডেন্ট নার্সদের নিয়ে গঠিত অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাইট লাইফ ভলান্টিয়ার্স’। মহানগরী ও জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বৃক্ষরোপণ ও গাছ উপহার দেয় সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) নার্সিং ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষ উপহার ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে।
এদিনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামেবির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন- রামেবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. হাসিবুল হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. জাকির হোসেন খন্দকার। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ব্রাইট লাইফ ভলান্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. আমানুল্লাহ আমান। এতে রাজশাহী নার্সিং কলেজের শিক্ষক আকতারা বেগমসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাজশাহীর বিভিন্ন নার্সিং কলেজের বিএসসি, ডিপ্লোমা ও মিডওয়াইফারি কোর্সের শিক্ষার্থী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে বৃক্ষ উপহার তুলে দেওয়া হয়। এরপর রামেবি প্রাঙ্গণে রোপণ করা হয় উন্নত জাতের আমগাছ।
কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামেবির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক বলেন, ‘পৃথিবীতে যত ভাল কাজ আছে, এরমধ্যে বৃক্ষরোপণ অন্যতম সর্বোত্তম ভাল কাজ। পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে গাছের ওপর। আমরা অক্সিজেন ছাড়া কোনোভাবে বাঁচতে পারব না। প্রতিদিন যে খাবার খাই, প্রায় হান্ড্রেড পার্সেন্টই আমরা গাছ থেকে খাই। আমরা বিছানায় শুয়ে থাকি, খাট-আসবাব এগুলো গাছ থেকে পাই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার, আমরা পরম বন্ধু গাছ থেকে পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাজই করি না কেন, আমাদের নিজেদের স্বার্থ একটু লুকায়িত থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে একমাত্র গাছ স্বার্থহীনভাবে অন্যকে সহায়তা করে। গাছ কোনোদিন প্রতিদান চায় না কারও কাছে। বৃক্ষরোপণ স্বর্গীয় একটি কাজ। পৃথিবীর ভাল কাজের ভাল কাজ এটি। ব্রাইট লাইফ ভলান্টিয়ার্স যে কাজ করল, এটা সাদকায়ে জারিয়া। গাছ যতদিন থাকবে, ফুল, ফল ও অক্সিজেন দেবে, সওয়াব পাওয়া যাবে।’
এ সময় রামেবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. হাসিবুল হোসেন বলেন, ‘একটি দেশের মোট জায়গার ২৬ পার্সেন্ট বনভূমি থাকা লাগে। আমাদের দেশে তা নেই। দিন দিন আরও কমে যাচ্ছে। যত গাছ লাগানো যায়, চেষ্টা করতে হবে। বাড়িতে প্রত্যেকে একটি করে গাছ লাগালে সেটা নিজের না, মানুষের ও দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। সেই আহবান জানাচ্ছি।’ রামেবির কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. জাকির হোসেন খন্দকার বলেন, ‘গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রতেকের গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা উচিত।’
সংগঠনটির সভাপতি আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘এ কর্মসূচির প্রথমত আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি। কারণ বৃক্ষরোপণ সাদকায়ে জারিয়া, এটি ইবাদত। সেজন্য এটি গ্রহণ করি। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- পৃথিবীতে ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে। অর্থাৎ জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমরা যে বিশ্বে বসবাস করছি, দিনে দিনে এটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে পুনরুদ্ধারে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস।’
মাসব্যাপী কর্মসূচিতে রোপণ করা ও উপহার দেওয়া গাছের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, ডালিম, খেঁজুর, লেবু, তেঁতুল, জলপাই, আমলকি, মেহগনি, কদবেল, নিম, কৃষ্ণচূড়া, নয়নতারা, বহরা, ছাতিম, দেবদারু ও জারুল গাছ ছিল উল্লেখযোগ্য। গত ২৪ জুন কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন নগরীর সপুরা গোরস্থানে কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এরপর জেলার সকল উপজেলায় কর্মসূচি অনষ্ঠত হয়। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ পুলিশ ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচিতে সংগঠনটির সিনিয়র সদস্য জুনায়েদ আহমেদ, আবু শুআইব আলম সিফাত, সাব্বির রহমান ইমন, আলফা, রুহুল আমিন আরাফাত, মেহেদি হাসান মনি, ইশতিয়াক আহমেদ, আব্দুল হাফিজ, রাজিয়া সুলতানা, সখিনা খাতুন, মোছা. জিম, মোছা. লতা, নাজমুল হাসান, আবু সাঈদ, ইকবাল মাহমুদসহ আরও অনেকেই অংশগ্রহণ করেন।
#ব্রাইট_লাইফ_ভলান্টিয়ার্স
#রাজশাহী #বৃক্ষরোপণ #নার্সিং #নার্স
#রাজশাহী_মেডিকেল_বিশ্ববিদ্যালয় #রামেবি
#bright_life_volunteers #Tree_plantation
#TreeGift #RMU #Rajshahi #Nursing #nurse